
মোহাম্মদ লুৎফুল হক সোয়েব
এস.এস.সি ’৮৮ ব্যাচের আমরা, যারা এই দেশের স্বাধীনতার সময়ের প্রজন্ম, প্রকৃত অর্থেই এক বিশেষ প্রজন্ম। আমাদের জন্ম এমন এক সময়ের মধ্যে হয়েছে যখন বাংলাদেশ তার নতুন যাত্রা শুরু করেছিল। বয়সের দিক থেকে আমরা ও আমাদের প্রিয় স্বদেশের বয়স প্রায় সমান। এই দীর্ঘ পথ চলার প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা দেশের অবকাঠামো, প্রযুক্তি, শিক্ষা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির সাক্ষী হয়েছি। ঠিক তেমনি নৈতিকতা, সামাজিক ও ব্যক্তিগত মূল্যবোধেরও অবনতি খুব কাছ থেকে দেখেছি।
এই দ্বৈত বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়ে, আমরা উপলব্ধি করতে পারছি যে আমাদের ওপর একটি বিশেষ দায়িত্ব বর্তায়—আগামী প্রজন্মের কাছে আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে সঠিক জীবনদর্শন ও দিকনির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া। কারণ, আমরা আমাদের জীবনে যে পরিবর্তন ও উন্নতি প্রত্যক্ষ করেছি, তা তাদের মধ্যে সঠিকভাবে স্থানান্তরিত হলে তারা তাদের জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তুলতে পারবে।
আজকের দিনটি অনেক দিক থেকেই চ্যালেঞ্জপূর্ণ। প্রযুক্তির অভূতপূর্ব অগ্রগতি যেমন একদিকে আমাদের জীবনকে সহজ ও সমৃদ্ধ করেছে, অন্যদিকে নৈতিকতার অধঃপতন, মূল্যবোধের পরিবর্তন আমাদের সমাজকে এক অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের সন্তানরা বড় হচ্ছে এমন এক সময়ে, যেখানে সঠিক এবং ভুলের পার্থক্য অনেক ক্ষেত্রে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে আমরা, যারা একটি স্বাধীন দেশে জন্ম নিয়ে বড় হয়েছি, আমাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে আগামী প্রজন্মকে সুস্থ ও শুদ্ধ চিন্তার দিকে পরিচালিত করার সুযোগ আছে।
আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের জীবনের চলার পথে পাওয়া অভিজ্ঞতাগুলো—ভাল, মন্দ, সুখ, কষ্ট সবই আমাদের সন্তানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে। আমাদের প্রজন্মের অনেকেই নিজেদের জীবনে বিভিন্ন রকমের সাফল্য অর্জন করেছেন, কিন্তু সেই সাফল্যের পেছনে যে পরিশ্রম, সততা ও ধৈর্য ছিল, তা আজকের প্রজন্মকে বোঝাতে হবে।
আমরা চাই, আমাদের সন্তানরা যেন জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা যেন শুধু প্রযুক্তি বা আধুনিকতার দিকে না ছুটে, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের জায়গায়ও শক্ত অবস্থান নিতে শেখে। তাদের চলার পথ যেন সুস্থ, শুদ্ধ ও সুন্দর হয়, এমন এক সমাজ গড়ে তুলতে তারা অবদান রাখতে পারে।
এই দায়িত্বটি শুধু আমাদের নয়, বরং পুরো ’৮৮ ব্যাচের। আমাদের মধ্যে যারা অভিভাবক, শিক্ষক, সমাজসেবক বা অন্য যেকোনো পেশায় আছেন, সবাই মিলে একসাথে কাজ করলে আমরা একটি সুন্দর সমাজ উপহার দিতে পারব আগামী প্রজন্মকে। আমাদের সন্তানেরা যেন আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখে এবং নিজের পথ ঠিকঠাকভাবে তৈরি করতে পারে, তার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা প্রয়োজন।
সকলের সহযোগিতায় আমরা আমাদের প্রজন্মের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারব, এবং তাতে আমাদের সন্তানরাও তাদের জীবনে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। দেশকে এবং সমাজকে এগিয়ে নিতে আমাদের এই ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এস.এস.সি ’৮৮ ব্যাচের প্রত্যাশা—আগামী প্রজন্ম যেন সুস্থ, সৎ এবং নৈতিকতাপূর্ণ জীবনের পথে এগিয়ে যায়।