Blog

Let's See
Blog

বাংলাদেশে সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার এবং এর ঝুঁকি ও সাইবার নিরাপত্তা

27/10/2024 • Posted by: Admim

বাংলাদেশে সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার এবং এর ঝুঁকি ও সাইবার নিরাপত্তা

Engr. Mohammad Lutful Haque (Shoeb)

M. Sc. (Informatics and Computer Engineering) 

FIEB, FBCS

ভূমিকা:

প্রযুক্তির সহজলভ্যতার ফলে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বর্তমানে মানুষ যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ, তথ্য বিনিময় এবং বিনোদন গ্রহণ করতে পারে। দেশজুড়ে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার ফলে তরুণদের পাশাপাশি বয়স্করাও সোস্যাল মিডিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। তবে এই জনপ্রিয়তার পাশাপাশি সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সাথে সাথে কিছু গুরুতর ঝুঁকিও রয়েছে। এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় সাইবার নিরাপত্তা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এ প্রবন্ধে বাংলাদেশের সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার, এর সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং সেগুলি থেকে নিরাপদে থাকার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে

বাংলাদেশে সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার

বাংলাদেশে সোস্যাল মিডিয়ার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা এবং কম খরচে ইন্টারনেট পরিষেবা। নিচে সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র তুলে ধরা হলো:

যোগাযোগ: ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রাম, মেসেঞ্জার এসব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সাথে সহজে যোগাযোগ করা যায়। পরিবার থেকে দূরে থাকা ব্যক্তিরাও সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে দ্রুত বার্তা আদান-প্রদান করতে পারেন

ব্যবসা ও প্রচারণা: ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য বা সেবা প্রচারের জন্য সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সহজেই ক্রেতার সাথে যোগাযোগ এবং পণ্য বিক্রয় সম্ভব হচ্ছে

শিক্ষা ও তথ্য: ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকেরা বিভিন্ন শিক্ষামূলক কন্টেন্ট, ভিডিও এবং আর্টিকেল সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে শেয়ার করেন। অনলাইন ক্লাস, শিক্ষা কার্যক্রম, লাইভ সেমিনার ইত্যাদিও সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচালনা করা যায়

বিনোদন ও সংবাদ: সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে টিভি, চলচ্চিত্র, গান এবং খেলার লাইভ সম্প্রচার দেখা যায়। ফেসবুক, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে খবরাখবর, গুজব, গুঞ্জন এবং বিনোদনের ভিডিও সহজেই পাওয়া যায়

সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ঝুঁকি

সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহারের ফলে অনেক ধরনের ঝুঁকি ও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, যা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু ঝুঁকির কথা আলোচনা করা হলো:

প্রাইভেসির ঝুঁকি: সোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে অনেকে সাবধানতা অবলম্বন করেন না, যা প্রাইভেসি লঙ্ঘনের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। পরিচিত-অপরিচিত যে কেউ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে অপব্যবহার করতে পারে

সাইবার বুলিং ও হ্যারাসমেন্ট: সোস্যাল মিডিয়াতে অনেকেই মানসিক হয়রানির শিকার হন। বিশেষত কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা বেশি দেখা যায়। অপ্রত্যাশিত মন্তব্য, অপমানজনক পোস্ট বা ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও শেয়ারের মাধ্যমে সাইবার হ্যারাসমেন্ট ঘটে থাকে

ভুয়া তথ্য প্রচার ও গুজব: সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভুয়া তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা সমাজে ভুল ধারণার জন্ম দেয় এবং কখনও কখনও সহিংসতার কারণও হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত রাজনীতি, ধর্ম এবং সামাজিক ইস্যুতে গুজব ছড়িয়ে পরার প্রবণতা অনেক বেশি

ফিশিং ও স্ক্যাম: ফিশিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে সাইবার অপরাধীরা মিথ্যা লিংক বা মেসেজের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে। এছাড়া অনেকেই স্ক্যামের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতির শিকার হন, যেখানে অর্থ লেনদেনের জন্য মিথ্যা লিংক প্রেরণ করা হয়

মাদকের প্রচারণা ও চটকদার বিজ্ঞাপন: সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেকেই মাদক, অবৈধ ব্যবসা এবং অপ্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এই ধরনের বিজ্ঞাপনের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়

সাইবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা

সোস্যাল মিডিয়ার ঝুঁকি থেকে বাঁচতে এবং নিজের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কার্যকরী পদ্ধতি নিচে তুলে ধরা হলো:

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার ও বারবার পরিবর্তন: শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত এবং সেটি নিয়মিতভাবে পরিবর্তন করা উচিত। পাসওয়ার্ডটি সহজ হওয়া উচিত নয়; এতে সংখ্যা, বিশেষ চিহ্ন এবং বড় ও ছোট হাতের অক্ষর ব্যবহার করা উচিত

দ্বি-স্তরীয় প্রমাণীকরণ (Two-factor Authentication): এই প্রক্রিয়ায় লগইন করার সময় ব্যবহারকারীকে একটি কোড প্রবেশ করতে হয় যা মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে পাঠানো হয়। এটি তথ্য চুরির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়

অপরিচিত লিংক এড়িয়ে চলা ও সতর্কতা অবলম্বন করা: অপরিচিত বা সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করা এড়ানো উচিত। অনলাইনে যেখানে সন্দেহজনক কার্যক্রম দেখা যায় সেখানে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে

ব্যক্তিগত তথ্যের প্রাইভেসি সেটিংস আপডেট করা: সোস্যাল মিডিয়ার প্রাইভেসি সেটিংস নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করা উচিত এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেটিংস আপডেট করা উচিত। ব্যক্তিগত তথ্য এবং ছবিগুলি সকলের জন্য উন্মুক্ত না রাখাই বাঞ্ছনীয়

সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ সংস্থা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া: বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থা যেমন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (BTRC), ডিপার্টমেন্ট অব টেলিযোগাযোগ ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাইবার অপরাধের তদন্ত ও সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। সাইবার অপরাধের শিকার হলে এসব প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নেওয়া উচিত

ভবিষ্যত দৃষ্টিভঙ্গি ও সুপারিশ:

বাংলাদেশে সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে এবং এর প্রসার ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এই ব্যবহারের সাথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তাই সকল পর্যায়ে সাইবার নিরাপত্তা নীতি আরও সুসংহত করার প্রয়োজন রয়েছে। স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাইবার নিরাপত্তা ও সচেতনতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে তরুণদের সচেতন করা যেতে পারে। বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারকে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ সোস্যাল মিডিয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকে

উপসংহার:

সোস্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা পালন করছে। তবে এর অপব্যবহার এবং অনিরাপদ ব্যবহার আমাদেরকে বিপদের মুখোমুখি করতে পারে। সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সুরক্ষিত থাকতে হলে ব্যক্তিগত তথ্যের প্রাইভেসি রক্ষা, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার এবং অপরিচিত লিংক থেকে দূরে থাকাসহ অন্যান্য সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। এ ক্ষেত্রে সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং ব্যবহারকারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সঠিক পদক্ষেপ ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা সোস্যাল মিডিয়ায় আরও নিরাপদ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি