Blog

Let's See
Blog

উন্নয়ন বনাম পরিবেশ: একটি দ্বন্দ্ব - নীতিনির্ধারণ ও ভারসাম্য নিয়ে ভাবনা।

23/08/2025 • Posted by: Admim

-সোহেল আহমেদ পরান 

ভূমিকা: এক অনন্ত দোদুল্যমানতা

উন্নয়ন ও পরিবেশের দ্বন্দ্ব আজ আর কেবল আলোচনা নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের কেন্দ্রে এক গভীর সংকট। একদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্পায়ন, আর নগরায়নের আকাঙ্ক্ষাঅন্যদিকে প্রকৃতির নিঃশব্দ প্রতিবাদ। উন্নয়নের নামে গাছ কাটা, নদী দখল, বনাঞ্চল উজাড়, এবং প্লাস্টিক দূষণ আজ আমাদের ভবিষ্যৎকে সংকটে ফেলেছে। এই দ্বন্দ্বে সমাধান খুঁজতে হলে প্রয়োজন একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, যা উন্নয়ন ও পরিবেশ উভয়কেই সমান গুরুত্ব দেয়। এই প্রবন্ধে আমরা খুঁজব সমস্যার শিকড়, পর্যালোচনা করব বাস্তব চিত্র, কেস স্টাডি ও পরিসংখ্যান, এবং তুলে ধরব ভবিষ্যৎ পথনির্দেশ।

পরিবেশের প্রেক্ষাপট: অস্তিত্বের নিরবচ্ছিন্ন ক্যানভাস

পরিবেশ কেবল প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, এটি মানুষের টিকে থাকার জন্য একটি অপরিহার্য অবলম্বন। পরিবেশের প্রধান উপাদানমাটি, পানি, বাতাসএই তিনটি ছাড়াও রয়েছে গাছপালা, জীবজন্তু, পাহাড়-পর্বত, নদীনালা, আবাসন, রাস্তা, এমনকি আমাদের দেহে প্রভাব ফেলা প্রতিটি জীবাণু ও অনুজীব।

 বাংলাদেশে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন ইত্যাদি পরিবেশগত চাপে জনজীবন বিপর্যস্ত। বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অথচ ১৯৯৫ সালে প্রণীত পরিবেশ সংরক্ষণ আইন যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে আজও আমাদের পরিবেশ বিপন্ন থেকে গেছে। উন্নয়নের কথা ভেবে আমাদের প্রায়শই পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫: এক দৃঢ় বার্তা

বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলোবৈশ্বিক পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমন্বয় ঘটানো। ১৯৭২ সালে স্টকহোমে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সম্মেলনের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই দিবসটি আজ বিশ্বের সর্ববৃহৎ পরিবেশ সচেতনতা প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য "প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করো" (#BeatPlasticPollution) আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে যে এই দূষণ আজ একটি বৈশ্বিক মহামারির রূপ নিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপ, যেখানে এই বছরের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে, ইতিমধ্যেই ২০৪০ সালের মধ্যে "প্লাস্টিক-মুক্ত" অঞ্চল হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশ এই উদাহরণ থেকে শিখে জাতীয় পর্যায়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।

প্লাস্টিক দূষণ: একটি নীরব ঘাতক শৃঙ্খল

 

প্রতিদিন যে প্লাস্টিক আমরা ব্যবহার করিবোতল, ব্যাগ, প্যাকেট, খোসাতাদের একটি বিশাল অংশ সরাসরি পরিবেশে ফেলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশে ২০২৪ সালের হিসেবে প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টি হয়, যার মধ্যে মাত্র ৩৭.২% পুনর্ব্যবহৃত হয়। প্লাস্টিকের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ হলো মাইক্রোপ্লাস্টিক, যা ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট কণার আকারে পানি, বাতাস ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের রক্তে, এমনকি প্লাসেন্টাতেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। এটি কেবল মানব স্বাস্থ্যের জন্য নয়, জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্রের জন্যও মারাত্মক হুমকি।

বহুমাত্রিক দূষণ: একাধিক ঝুঁকির সম্মিলন

বায়ুদূষণ: ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানদণ্ডের কয়েকগুণ বেশি। যানবাহনের ধোঁয়া, ইটভাটা, কলকারখানা ও বর্জ্য পোড়ানো মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর আনুমানিক ২ লাখ ৩৬ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটেএ তথ্য ইন্সটিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশন (IHME)-এর গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ (GBD) রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে প্লাস্টিক ও অন্যান্য কঠিন বর্জ্য পোড়ানো একটি বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করে, যা শুধু বায়ুর গুণমান নষ্ট করে না, দীর্ঘমেয়াদে জনস্বাস্থ্যেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলে।

পানি ও মাটি দূষণ: হাজারীবাগের চামড়া কারখানা এবং চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের শিল্প এলাকা থেকে নির্গত বর্জ্য নদী ও জমিকে দূষিত করে। বিশেষ করে ট্যানারি বর্জ্যে থাকা ক্রোমিয়াম ও অন্যান্য ভারী ধাতু মাটির উর্বরতা নষ্ট করে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, কৃষিজমিতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক মালচযা একটি পাতলা প্লাস্টিকের স্তর মাটির উপর বিছিয়ে আগাছা নিয়ন্ত্রণ, আর্দ্রতা রক্ষা এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়দীর্ঘমেয়াদে মাটির স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত করে এবং পানি ও পুষ্টি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এতে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়, মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ফলনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।

শব্দদূষণ: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৮৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ দীর্ঘমেয়াদে শ্রবণশক্তির ক্ষতি করতে পারে। বাংলাদেশের নগর অঞ্চলগুলোতে, বিশেষ করে ঢাকায়, শব্দের মাত্রা দিনের বেলায় ১০০ থেকে ১২০ ডেসিবেলের মধ্যে ওঠানামা করে, যা অতি বিপজ্জনক। যানজটপূর্ণ সড়ক, নির্মাণকাজ, হাইড্রোলিক হর্ন, এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এই মাত্রা আরও বেড়ে যায়। হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে এই মাত্রার শব্দ শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদী শব্দদূষণ কেবল শ্রবণশক্তিই নয়, মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এমনকি স্মৃতিভ্রংশের মতো সমস্যার সম্ভাবনাও বাড়ায়।

তেজস্ক্রিয় দূষণ: ইলেকট্রনিক বর্জ্য বা ই-ওয়েস্টের অপ্রশিক্ষিত ও অব্যবস্থাপিত পুনর্ব্যবহার কার্যক্রম পরিবেশের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। অনেক সময় ব্যবহৃত ব্যাটারি, মনিটর, সোলার প্যানেল, সার্কিট বোর্ড ও অন্যান্য যন্ত্রাংশে সীসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম এবং তেজস্ক্রিয় উপাদান থাকে। অদক্ষভাবে এগুলো খোলা পরিবেশে পোড়ানো বা মাটিতে পুঁতে ফেলার কারণে এই বিষাক্ত উপাদানগুলো মাটি ও পানিতে মিশে যায়। এর ফলে ক্যানসার, বন্ধ্যাত্ব, স্নায়ুবিক সমস্যা, জন্মগত ত্রুটি এমনকি শিশুদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। গবেষণা বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার শহরগুলোতে ই-ওয়েস্ট থেকে নির্গত বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় এমন অবৈধ রিসাইক্লিং সাইট চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে সুরক্ষাবিহীন শ্রমিকরা প্রতিদিন বিষাক্ত উপাদানের সংস্পর্শে কাজ করছেন।

 

কেইস স্টাডি: বাস্তবতায় প্রতিচ্ছবি

 

হাজারীবাগ ট্যানারি সংকট: কয়েক দশকের টালবাহানার পর, ঢাকার হাজারীবাগে অবস্থিত চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলোকে পরিবেশগত ক্ষতির কারণে সাভারে স্থানান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিলবুড়িগঙ্গা নদীকে দূষণমুক্ত করা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা। ২০১৭ সালে সরকারিভাবে স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু হলেও, অবকাঠামোগত অসঙ্গতি, অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং মালিকপক্ষের দ্বিধার কারণে ২০২৫ সালেও অনেক প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি স্থানান্তরিত হয়নি। ফলস্বরূপ, বুড়িগঙ্গা নদী এখনও ট্যানারির বিষাক্ত তরল বর্জ্য, রঙ, কেমিক্যাল এবং কঠিন আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে। নদীর জলজ জীববৈচিত্র্য হ্রাস পেয়েছে, আশেপাশের এলাকায় দুর্গন্ধ ও রোগবালাই বেড়েছে। এই সংকট শুধু পরিবেশ নয়, হাজারো মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে উঠেছে।

 

চট্টগ্রামের প্লাস্টিক জঞ্জাল: চট্টগ্রাম শহরে দৈনিক প্রায় ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার একটি বিশাল অংশ অব্যবস্থাপিত অবস্থায় কর্ণফুলী নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে। এই বর্জ্যের মধ্যে থাকে বোতল, খাবারের মোড়ক, ফোম, সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিক ব্যাগ, এবং ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক পণ্য। কর্ণফুলী নদী ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম দূষিত নদীতে পরিণত হয়েছেযেখানে জলের নিচে অক্সিজেনের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এর ফলে নদীর এবং সাগরের প্রাণীকুল যেমন চিংড়ি, ইলিশ, ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে।

গবেষণা অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে কয়েক হাজার কণা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এ বর্জ্য শুধু প্রাণীকুল নয়, মাছের মাধ্যমে মানুষের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং নাগরিকদের সচেতনতার অভাব মিলিয়ে এই সমস্যা দিনকে দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে।

 

গাবুরার লবণাক্ততা সংকট: সাতক্ষীরার উপকূলীয় ইউনিয়ন গাবুরা জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি শিকার। সাইক্লোন, নদীভাঙন এবং বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার মতো দুর্যোগের পাশাপাশি এই অঞ্চলে সম্প্রতি নতুন এক পরিবেশগত সংকট দেখা দিয়েছেচিংড়ি চাষে ব্যবহৃত প্লাস্টিক সামগ্রী জমির লবণাক্ততা বাড়িয়ে দিচ্ছে। চাষের সময় পলিথিন এবং প্লাস্টিক শিট দিয়ে পুকুরের তলদেশ ঢেকে রাখা হয়, যা জমির সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে থেকে লবণের শোষণক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এতে জমির প্রাকৃতিক শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যাহত হয় এবং জমির লবণাক্ততা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। এই লবণাক্ত মাটি পরবর্তীতে ধান, পাট বা সবজি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

 ২০২৪ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, গাবুরার প্রায় ৪০% জমিতে ফসল উৎপাদন ৬০% পর্যন্ত কমে গেছে। এতে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাদের অনেকেই কর্মসংস্থানের জন্য শহরমুখী হচ্ছে বা জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে তবে আগামী এক দশকে গাবুরা ইউনিয়নের অর্ধেকেরও বেশি পরিবার হয়তো নিজ ভূমি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবে।

 

আন্তর্জাতিক উদাহরণ:

জেজু দ্বীপ: দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপ শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, পরিবেশ সচেতনতার ক্ষেত্রেও একটি অনন্য উদাহরণ। এখানে বর্জ্য পৃথকীকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং প্রায় প্রতিটি পরিবার ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এই নীতিমালা অনুসরণ করে। খাদ্য বর্জ্য, পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য ও সাধারণ বর্জ্য আলাদাভাবে ফেলা বাধ্যতামূলক। একটি বাড়ির বাসিন্দা যদি সঠিকভাবে বর্জ্য আলাদা না করে, তবে তাকে জরিমানা দিতে হয়।

জেজু দ্বীপে ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট ও পাবলিক স্পেসে একক ব্যবহারের কাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পরিবর্তে, গ্রাহকরা রিফান্ডযোগ্য ডিপোজিট দিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপ ব্যবহার করে এবং ব্যবহার শেষে নির্ধারিত পয়েন্টে ফেরত দেন। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দ্বীপে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২২ সালে জেজু কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে ২০৪০ সালের মধ্যে তারা দ্বীপটিকে পুরোপুরি ‘প্লাস্টিক-মুক্ত’ অঞ্চলে পরিণত করতে চায়। এই লক্ষ্যে তারা স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ইনসেনটিভ, এবং প্রযুক্তি-নির্ভর বর্জ্য পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করেছে। জেজুর এই রূপরেখা উন্নয়ন ও পরিবেশের সহাবস্থানের একটি বাস্তব উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

নমামি গঙ্গে, ভারত: ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪ সালে ‘নমামি গঙ্গে’ নামে একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প শুরু করে, যার মূল লক্ষ্য ছিল গঙ্গা নদীকে দূষণমুক্ত এবং জীববৈচিত্র্যপূর্ণ নদী হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এই প্রকল্পের অধীনে গঙ্গা অববাহিকার বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় ৩০০টিরও বেশি আধুনিক জৈব এবং রাসায়নিক শোধনাগার স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে গৃহস্থালি এবং শিল্পবর্জ্য শোধন করে নদীতে নির্গত করা হয়।

এই প্রকল্পে শুধু শোধনাগার নয়, নদীর তীরে থাকা শহরগুলোতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মৃতদেহ সৎকারের উন্নত বিকল্প, নদীর পাড় সংরক্ষণ, এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শোধিত বর্জ্য নির্গমনের ফলে গঙ্গার পানির ‘বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিম্যান্ড’ (BOD) উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা নদীর প্রাণীদের জন্য সহনশীল পরিবেশ তৈরি করেছে।

এছাড়া ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পে স্থানীয় পঞ্চায়েত, স্কুল ও স্বেচ্ছাসেবীদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে নদীর প্রতি মানুষের দায়বোধ ও অংশগ্রহণ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। গঙ্গার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ডলফিন সংরক্ষণ কর্মসূচি, নৌপর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা এবং নদীভিত্তিক পর্যটনের বিকাশ এই প্রকল্পের অংশ। নমামি গঙ্গে প্রকল্প এখন জাতীয় সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মডেল হিসেবে স্বীকৃত, যেখানে উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ একসঙ্গে অগ্রসর হয়েছে।

রুয়ান্ডা: আফ্রিকার ক্ষতিগ্রস্ত ও গৃহযুদ্ধ-পীড়িত একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও, রুয়ান্ডা ২০০৮ সালে একক ব্যবহারের প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করে এক নজিরবিহীন পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় প্লাস্টিক ব্যাগ, প্লাস্টিক মোড়ক এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে রুয়ান্ডা সরকার শুধু আইন প্রণয়নেই থেমে থাকেনি; তারা সীমান্তে তল্লাশি, দোকানপাটে পর্যবেক্ষণ, এবং উৎপাদক ও আমদানিকারকদের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা, পণ্য বাজেয়াপ্তকরণ এবং জেল পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।

এর ফলে রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালি বর্তমানে আফ্রিকার অন্যতম পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে পরিচিত। শহরের রাস্তাঘাট প্লাস্টিকমুক্ত, খাল-নালা পরিষ্কার এবং নাগরিকরাও অত্যন্ত সচেতন। প্রতি মাসের শেষ শনিবার “উমুগান্ডা” নামে একটি জাতীয় পরিচ্ছন্নতা দিবস পালন করা হয়, যেখানে সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও সাধারণ মানুষ একসঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় অংশ নেয়।

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি UNEP রুয়ান্ডার এই উদ্যোগকে ‘পরিবেশগত শ্রেষ্ঠ অনুশীলন’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রুয়ান্ডা কেবল একটি সমস্যার সমাধানই করেনি, বরং গোটা বিশ্বকে দেখিয়েছে কীভাবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, জনসম্পৃক্ততা এবং কার্যকর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে একটি উন্নয়নশীল দেশও পরিবেশ রক্ষায় নেতৃত্ব দিতে পারে।

উন্নয়নের দ্বন্দ্ব: লাভ নাকি লাঞ্ছনা?

বাংলাদেশে গত এক দশকে অর্থনীতির বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ৬-৭ শতাংশ হলেও এর বিপরীতে পরিবেশগত ক্ষতির পরিমাণ ছিল বিপুল। শহরকেন্দ্রিক শিল্পায়ন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, আধুনিক অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে সাথে বেড়েছে বন উজাড়, পানি ও বায়ুদূষণ এবং জমির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার। প্লাস্টিক দূষণ, গাড়ির ধোঁয়া, শিল্পবর্জ্য, ও রাসায়নিক কৃষিজ উপকরণ ব্যবহারসব মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণে জিডিপির প্রায় ৩-৩.৫% ক্ষতি হচ্ছে যা অর্থনীতির জন্য এক অদৃশ্য কর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার আশেপাশের শিল্পাঞ্চল যেমন সাভার, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী এবং গাজীপুর অঞ্চল থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক ও রাসায়নিক বর্জ্য নদীতে পড়ছে। এই বর্জ্যের বেশিরভাগই অপরিশোধিত থাকে, ফলে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে উঠছে এবং জলজ পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। জলজ প্রাণী, যেমন মাছ ও শামুকের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে এবং স্থানীয় জেলেরা আর আগের মতো মাছ পাচ্ছেন না।

বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি উন্নয়ন প্রকৃতির বিনিময়ে হয়যেমন বনভূমি উজাড় করে রাস্তাঘাট বানানো, নদী ভরাট করে আবাসন প্রকল্পতবে সে উন্নয়ন ক্ষণস্থায়ী হবে। কারণ পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হলে দীর্ঘমেয়াদে কৃষি, জনস্বাস্থ্য, পানীয়জল, এমনকি নগর ব্যবস্থাপনাও ব্যাহত হবে। অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে টেকসই করতে হলে পরিবেশের সাথে সমন্বয় করেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

সমাধান: ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার রোডম্যাপ

নীতিমালা ও বাস্তবায়ন:

পরিবেশ সংরক্ষণে নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে তার বাস্তবায়ন কার্যক্রম এখনও দুর্বল। ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং ২০১০ সালের প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এসব আইনের মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন ও নীতিমালাগুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং জনসম্পৃক্ততা।

প্লাস্টিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। এর পাশাপাশি, প্রতিটি উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও জরিমানার ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে।

পরিবেশ আদালতের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ, দক্ষ বিচারক ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ এবং ডিজিটাল মামলার ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চালু করা উচিত।

পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (EIA) ছাড়া যেন কোনো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন না পায়, তার জন্য একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন ডেটাবেস তৈরি করে জনসাধারণের পর্যবেক্ষণের সুযোগ রাখতে হবে।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে (ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা) নীতিমালার অংশ হিসেবে প্রশিক্ষিত করতে হবে, যাতে তারা নিজ নিজ এলাকার পরিবেশগত তদারকিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। প্লাস্টিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে নজরদারি জোরদার করতে হবে।

পরিবেশ আদালত কার্যকর করে জরুরি মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সবুজ প্রযুক্তি ও বিকল্প:

সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহার এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং এটি সময়ের দাবি। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি আমাদেরকে এমন এক বিকল্প পথে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে উন্নয়ন ও পরিবেশের মধ্যে আর বিরোধ থাকবে না। এতে যেমন জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমবে, তেমনই কমবে কার্বন নিঃসরণ ও বায়ুদূষণ।

পাট ও প্রাকৃতিক ফাইবার: পলিথিন ও প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাট, কলাপাতা, নারকেলের ছোবড়া, তালের পাতা বা বাঁশের তৈরি সামগ্রী ব্যবহার করা যায়। পাটজাত পণ্যে কর রেহাই, বিপণনের সুযোগ বৃদ্ধি এবং রপ্তানি সহায়তা দিলে দেশীয় উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন।

বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক: স্টার্চ, ভুট্টা, আলু বা আখের নির্যাস থেকে তৈরি হওয়া পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক ব্যবহারে ত্বরান্বিত করা যেতে পারে। এটি সহজে মাটিতে মিশে যায় এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি করে না।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি: সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ও জলশক্তির ব্যবহার বাড়ানো গেলে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব। শহর এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপন বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে, বিশেষ করে সরকারি ভবন ও শিল্প স্থাপনায়।

সবুজ নির্মাণ প্রযুক্তি: আধুনিক নির্মাণ পদ্ধতিতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা, ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রাকৃতিক বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, এবং পুনর্ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার জনপ্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশেও এই প্রযুক্তি গ্রহণযোগ্য করার জন্য প্রণোদনা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার।

ইকো-ট্যুরিজম ও ডিজিটাল সেবা: পর্যটনখাতে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ যেমন নো-প্লাস্টিক জোন, সবুজ রিসোর্ট, ও স্থানীয় সংস্কৃতি-ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বাড়ানো যায়। ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী কাজ, অনলাইন মিটিং ও ই-পেমেন্ট বাড়ালে কাগজ, জ্বালানি ও প্লাস্টিক ব্যবহার কমবে। পাটপণ্যের উপর কর রেহাই দিয়ে বায়োডিগ্রেডেবল শিল্পের প্রসার ঘটানো যায়।

সৌর প্যানেল, বায়ুশক্তি ও জলশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহার:

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আমাদের পরিবেশ রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, বিশেষ করে শহরায়নের এই সময়ে। প্রতিদিন আমাদের ঘর, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কৃষিখাত থেকে বিপুল পরিমাণ কঠিন, তরল ও জৈব বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। এই বর্জ্য যদি সঠিকভাবে সংগ্রহ, পৃথকীকরণ, এবং পুনর্ব্যবহার না করা হয়, তবে তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। শহরাঞ্চলে অধিকাংশ বর্জ্য ড্রেনেজ ব্যবস্থায় আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে, গ্রামীণ অঞ্চলে কৃষিজ বর্জ্য মাটির উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে।

বর্জ্য পৃথকীকরণ: গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে জৈব, পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং অননুৎপাদনযোগ্য বর্জ্য আলাদা করে ফেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

কমিউনিটি রিসাইক্লিং কেন্দ্র: প্রতিটি ওয়ার্ডে বা পাড়ায় ছোট ছোট রিসাইক্লিং কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে, যেখানে স্থানীয় জনগণ নিজ উদ্যোগে বর্জ্য জমা দিতে পারবে।

অর্গানিক কম্পোস্টিং: জৈব বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট সার তৈরির উদ্যোগ নিলে কৃষিক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন বাড়বে এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রয়োজন কমবে।

ই-ওয়েস্ট রিসাইক্লিং: পুরনো মোবাইল, কম্পিউটার, ব্যাটারি ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য আলাদা স্থানে বক্স বসিয়ে রিসাইক্লিং প্লান্টে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

সমবায় ভিত্তিক কর্মসংস্থান: বর্জ্য সংগ্রহকারীদের নিয়ে নিবন্ধিত সমবায় গঠন করলে তারা সুরক্ষিত পরিবেশে কাজ করতে পারবে এবং সামাজিক মর্যাদা পাবে।

নির্বিচারে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে, পুনর্ব্যবহার ও পুনরুৎপাদনের দিকে গেলে আমরা পরিবেশ দূষণ কমাতে পারব এবং সুশৃঙ্খল নগর জীবন নিশ্চিত করতে পারব।

প্রতিটি ওয়ার্ডে পৃথক বর্জ্য বিন, স্থানীয় পর্যায়ে রিসাইক্লিং কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

কাঁচামাল সংগ্রহকারীদের একটি নিবন্ধিত সমবায় গঠন করা যেতে পারে, যাতে তারা সম্মানজনকভাবে আয় করতে পারে।

সচেতনতা ও শিক্ষা:

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবেশ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত।

স্থানীয় সাংস্কৃতিক উৎসব, গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতামূলক প্রচার চালাতে হবে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:

বৈশ্বিক তহবিল (Climate Resilience Fund) থেকে অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশকে সক্রিয়ভাবে আবেদন করতে হবে।

উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে প্রযুক্তি হস্তান্তর ও গবেষণা সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

 পরিবেশগত ন্যায়বিচার: কার দোষ, কে ভোগে?

পরিবেশ দূষণের প্রভাব সব শ্রেণি ও গোষ্ঠীর ওপর সমানভাবে পড়ে না। শহরের প্রভাবশালী গোষ্ঠী যখন অবাধে প্রকৃতি ধ্বংসের অনুমোদন পায়, তখন এর চূড়ান্ত মূল্য চাষি, জেলে, শ্রমজীবী মানুষদেরই দিতে হয়। ঢাকার বাতাস যখন বিষাক্ত হয়ে ওঠে, তখন দুঃস্থ পথশিশু, রিকশাচালক, ট্রাফিক পুলিশই সবচেয়ে বেশি ভোগে।

গাবুরার মত উপকূলীয় অঞ্চলে প্লাস্টিক দূষণ ও লবণাক্ততা বাড়লেও তেমন কোনো ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা নেই। অথচ দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো দূরে বসে মুনাফা তুলছে। এটাই পরিবেশগত অন্যায়। তাই নীতিনির্ধারণে এই ভয়েসগুলোকে যুক্ত করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ড. সালেহিন ইসলাম বলেন, “পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কেবল কার্বন নির্গমন নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যও জরুরি।” এই চিন্তাই পরিবেশগত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে।

 উপসংহার: আমরা কি মানুষ হবো?

প্রকৃতি তার নিয়ম মানে। আমরা কি মানি? না মানলে প্রকৃতি তার মূল্য আদায় করে নেবে। উন্নয়ন যদি অন্ধ হয়, তবে সে ধ্বংস ডেকে আনে। একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ ও সবুজ বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষা, সচেতনতা, প্রযুক্তি ও নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা পরিবেশের সাথে উন্নয়নের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পারি। ভবিষ্যৎ আমাদেরই হাতে।

পরিবেশ, পরিবেশদূষণ আর সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা নিয়ে শেষ কথা বলে কিছু নেই। পরিবেশগত বড় ঝুঁকির মধ্যে আছে বাংলাদেশ। এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের প্রয়োজন সঠিক ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ। মনে রাখতে হবে- পরিবেশেই আমরা বাঁচি আর পরিবেশই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। তাই নিতান্ত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী-স্বার্থে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু করা হবে নিজের পায়ে কুড়াল মারার নামান্তর। অধিক মুনাফা অর্জনের প্রতিযোগিতা যেনো আমাদের অন্ধ করে না ফেলে। প্রকৃতি কিন্তু নিয়ম মেনে চলে। তার ওপর অযাচিত অত্যাচার সে মেনে নেবে না কোনোমতে। চাই সবার স্বতঃস্ফূর্ত সচেতনতা।

 শেষ করছি একটি লিমেরিক দিয়েঃ

 

প্রকৃতিতো নিয়ম মানে, আমরা মানুষ মানি না

পরিবেশের বারোটা বাজাই, জেনেও যে জানি না

ভারসাম্য সে হারায় ক্রমে

এ সবইতো মানব ভ্রমে

পরিবেশ যে কেঁদে ফেরে, এটা কোনো গ্লানি না?

Environment wails alone burdened by pollution

Unplanned emissions do aggravate the collision

Sea-levels rising fast

Risking lives like a dust

O world! come together get a better solution.

 

তথ্যসূত্র ও রেফারেন্স:

Bangladesh Department of Environment (DoE) Reports – http://www.doe.gov.bd

Global Burden of Disease Report, IHME (2019) – https://www.healthdata.org/gbd

Bangladesh Bank & DoE Joint Environmental Report (2023)

UNEP World Environment Day Archive – https://www.unep.org

World Bank Climate Change Knowledge Portal – https://climateknowledgeportal.worldbank.org

Namami Gange Project, India – https://nmcg.nic.in

Rwanda Environmental Management Authority – https://rema.gov.rw

South Korea Ministry of Environment (Jeju Island Zero Plastic Initiative) – https://eng.me.go.kr

IFPRI Report on Climate Migration in Coastal Bangladesh – https://www.ifpri.org

Environmental Performance Index (EPI), Yale – https://epi.yale.edu

Local newspaper archives (Daily Star, Prothom Alo, Dhaka Tribune)